তানিম আহমেদ, নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নে এখনো দাঁড়িয়ে আছে ভালোবাসার এক চিরন্তন নিদর্শন—ইতিহাসখ্যাত কমলা রানী দিঘি, যা স্থানীয়ভাবে সুতানাল দিঘি নামেও পরিচিত।প্রেম, ত্যাগ আর বিরহের গল্প বুকে নিয়ে এই দিঘি আজও মানুষের কাছে স্মৃতিচিহ্ন হয়ে আছে।
ইতিহাস বলে, মোগল আমলের স্থানীয় শাসক রাজা সামন্তলাল তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী কমলা রানীকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের জন্য উপহার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন রাজা । তখন রানী বলেছিলেন—ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে এমন কিছু দান করুন, যা যুগ যুগ ধরে মানুষ মনে রাখবে ।
রাজা তখন সিদ্ধান্ত নিলেন অবিরাম এক রাত এক দিন সুতা কাটা হবে। আর সেই সুতার সমান দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মেপে খনন করা হয় দিঘি।রাজা সামন্তলাল ভালোবেসে ৬০ একরের এক দিঘি খনন করেছিলেন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর আবদার পূরণের জন্য। দীর্ঘদিন খননের পর বিশাল এই দিঘি তৈরি হলেও পানিশূন্য থেকে যায়। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েন রাজা ও রানী।
পরে কমলা রানী স্বপ্নে আদেশ পান—গঙ্গাপূজা ও নরবলি ছাড়া দিঘিতে পানি উঠবে না। কিন্তু তিনি নরবলি না দিয়ে মহাধুমধামে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গঙ্গামাতার পূজার আয়োজন করেন। পূজার সময় গঙ্গামাতার কাছে প্রার্থনা জানিয়ে তিনি বলেন—কোন মায়ের বুক খালি করে আমি নরবলি দেব? আমি সন্তানসম্ভবা, মাগো তুমি বর দাও।
হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দে দিঘিতে পানি উঠতে শুরু করে। সবাই প্রাণে বাঁচলেও রানী আর বাঁচতে পারেননি। টইটুম্বুর জলে ভেসে গিয়ে তিনি তলিয়ে যান। এরপর থেকে এই দিঘি মানুষের কাছে ‘কমলা রানী দিঘি’ বা ‘সুতানাল দিঘি’ নামে পরিচিতি পায়।
আজও এলাকার প্রবীণরা বলেন, এটি শুধু একটি জলাধার নয়; বরং ভালোবাসা ও ত্যাগের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন। যে নিদর্শন যুগ যুগ ধরে নতুন ভালোবাসার গল্পকে অনুপ্রেরণা দিয়ে আসছে।
সম্পাদক: মোহাম্মদ সোলায়মান প্রকাশক: এনামুল হক জুনায়েদ
কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ।
যোগাযোগ: ০১৯০৭-৮৩৬৮০৮, ইমেইল: newsnagar@gmail.com
নিউজ নগর