তানিম আহমেদ, নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেলেও, ব্যতিক্রম দেখা গেছে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বন্দনা চাম্বুগংকে ঘিরে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এখনও এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম রেখেছেন। জমি দখল, টাকা আত্মসাৎ , জাল জালিয়াতি, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি—এমন নানান অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিগত সরকার আমল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বন্দনা চাম্বুগংয়ের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডালুকোনা গ্রামের জিবিতা মারাক (৪০) জানান, তার নামে থাকা জমির কাগজ কৃষি ব্যাংকে বন্ধক রেখে বন্দনা চাম্বুগং ১ লাখ টাকা ঋণ নেন, কিন্তু ঋণ পরিশোধে অস্বীকৃতি জানান। এ ঘটনায় জিবিতা মারাক নালিতাবাড়ী থানায় মামলা করলে ১৪ আগস্ট পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। তবে চাঞ্চল্যের বিষয়, সেদিনই তিনি জামিনে মুক্তি পান।
একই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে, জিবিতা মারাককে প্রতারণার মাধ্যমে জমির খারিজ করিয়ে ৪ একর ৯২ শতাংশ জমি দখলের চেষ্টা করেন বন্দনা চাম্বুগং। জিবিতা মারাক এ ঘটনায় সিআর আমলী আদালতে জালিয়াতির মামলা দায়ের করেছেন।
ডালুকোনা গ্রামের আব্দুস সালামের ৬৫ শতাংশ জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগেও সিআর আমলী আদালতে মামলা হয়। আদালতের নির্দেশে সিআইডি তদন্ত শেষে রিপোর্ট দেয় যে, বন্দনা চাম্বুগং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জাল ওয়ারিশান সার্টিফিকেট তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে জমি আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন। রিপোর্টটি ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে আদালতে পেশ করা হয়।
একই ধরনের আরেকটি ঘটনায়, নয়াবিল ইউনিয়নের দাওধারা গ্রামের মো. ওমর ফারুকের ১ একর ৮৫ শতাংশ জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে সিআইডি তদন্ত শেষে রিপোর্ট দেয়—বিবাদী বন্দনা চাম্বুগং ওই জমির কোনো ওয়ারিশ নন, বরং প্রতারণার মাধ্যমে জমি দখলের চেষ্টা করেছেন। রিপোর্টটি আদালতে জমা হয় ২৪ মার্চ ২০২৫ তারিখে।
অভিযোগ রয়েছে, জালিয়াতি করে জমি দখলে সহযোগিতা না করায় বন্দনা চাম্বুগং প্রতিশোধ নিতে ডালুকোনা গ্রামের ৯ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার মোকদ্দমা নম্বর ৬০৭/২০২৫, দায়েরের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২৫।
পোড়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন,
বন্দনা চাম্বুগং পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও নানা অপকর্ম করেছে এবং এখনো করছে। কে বা কোন অদৃশ্য শক্তি তাকে সহযোগিতা করছে, তা জানা নেই। তবে আমরা চাই এই রহস্য উদঘাটন হোক এবং বন্দনা চাম্বুগংয়ের বিচার হোক। সাধারণ মানুষ তার অত্যাচার থেকে মুক্তি চায়।
বারোমারি মিশনের প্যারিস কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও আদিবাসী নেত্রী সুচিত্রা চিছাম বলেন,
রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বন্দনা চাম্বুগং এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছেন। আমরা সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে তার অপকর্মের বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দনা চাম্বুগং জানান,
এই সবই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।
সরকার পতনের পরও কীভাবে বন্দনা চাম্বুগং এমন ক্ষমতার প্রভাব খাটাচ্ছেন? কে দিচ্ছে তাকে এই অদৃশ্য শক্তি? এলাকাবাসীর দাবি—অবিলম্বে এর রহস্য উদঘাটন ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
সম্পাদক: মোহাম্মদ সোলায়মান প্রকাশক: এনামুল হক জুনায়েদ
কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ।
যোগাযোগ: ০১৯০৭-৮৩৬৮০৮, ইমেইল: newsnagar@gmail.com
নিউজ নগর