তানিম আহমেদ, নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী বিটের হালচাটি, মালিটিলা, গজারীচালা, মাগুনঝুড়া, দরবেশতলা ও ৫ নম্বর এলাকায় প্রতিরাতে হাজার হাজার টাকার অবৈধ বালু পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিট কর্মকর্তা সালেহীন নেওয়াজের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে মাহিন্দ্র গাড়ি ব্যবহার করে নিয়মিত বালু পাচার করছে। চক্রটির সদস্য সংখ্যা ৮ থেকে ১০ জন। নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে তারা কখনো রাজনৈতিক পরিচয় আবার কখনো প্রভাবশালী নেতাদের নাম ব্যবহার করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল রাতভর মাঠে থেকে অবৈধ বালু পাচার ঠেকাতে অভিযান চালাচ্ছেন। তবে প্রশাসন ও সাংবাদিকরা কঠোর অবস্থান নিলে প্রভাবশালী নেতাদের চাপ, হুমকি এবং তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের দাবি, অবাধে বালু পাচার চলতে থাকলে গারো পাহাড় অচিরেই নেড়া পাহাড়ে পরিণত হবে। এতে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি সরকারও হারাবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
গজনী বিট কর্মকর্তা সালেহীন নেওয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি দায়িত্বে থেকেও দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার ছুটি কাটান আর সেই সুযোগে বালুখেকোরা অবাধে বালু লুটে নিচ্ছে।
শিক্ষানবিশ ফরেস্ট রেঞ্জার তহিদুল ইসলাম বলেন, “আমি এই বিটে যোগদানের পর দিনরাত স্বল্পসংখ্যক স্টাফ নিয়ে লড়াই করছি। ইতিমধ্যে একটি মাহিন্দ্র জব্দ করে মামলা করেছি। মালিটিলা এলাকায় বালুভর্তি গাড়ি আটকাতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকিও নিতে হয়েছে। পাচারকারীরা আমাকে অবরোধের চেষ্টা করেছে। এরপরেও নিয়মিত পাচার প্রতিরোধ করছি। ফলে চক্রটি আমাকে টার্গেট করে মিথ্যা অভিযোগ ও হুমকি দিচ্ছে। তবে কোনো হুমকিতেই আমি দমে যাব না।
রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল করিম বলেন, গজনীতে নিয়মিত বালু পাচারের সত্যতা মিলেছে। এজন্য আমিও রাতভর মাঠে থেকে প্রতিরোধের চেষ্টা করছি। বিট কর্মকর্তা সালেহীন নেওয়াজ খানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, “গত কয়েক মাসে আমি একাধিক অভিযান চালিয়ে গাড়ি জব্দ করেছি, পাচারকারীদের কারাদণ্ড ও জরিমানাও করেছি। প্রয়োজনে আরো কঠোর হবো। পাহাড় ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারী বালুখেকোদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রশাসন শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বালু পাচার বন্ধ হচ্ছে না। তাদের অভিযোগ, গজনী বিট কর্মকর্তা সালেহীন নেওয়াজ এ কাজে জড়িত। তাই তাঁকে দ্রুত বদলির জন্য উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।