তানিম আহমেদ, নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত তিনতলা কোয়ার্টারটি এখন পরিণত হয়েছে মাদকের আখড়ায়। প্রতিদিন রাত হলেই সেখানে বসছে মাদক সেবনের আসর, চলছে জুয়া ও বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ। একসময় এই ভবনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মীরা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ভবনটি পরিত্যক্ত থাকায় এখানে অবাধে মাদক সেবন, জুয়া খেলা এবং ছেলেমেয়েদের অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। রাত নামলেই দলবেঁধে মাদকসেবীরা এই ভবনে প্রবেশ করে। হাসপাতালের মূল গেইটে নিরাপত্তার অভাবের কারণে সহজেই ঢুকতে পারে তারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানলেও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না, ফলে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ভবনের প্রতিটি রুমে মাদকদ্রব্যের প্যাকেট, মদের বোতল, সিগারেটের খালি প্যাকেট, ইয়াবার আলামত, দিয়াশলাইসহ নানা সরঞ্জাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। শুধু তাই নয়, গর্ভনিরোধক প্যাকেট ও মেয়েদের ব্যবহৃত পোশাকও পাওয়া গেছে, যা অসামাজিক কার্যকলাপের প্রমাণ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এই ভবনটি মাদকসেবীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়। পুলিশ এলে আগেই খবর পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। মনে হয় ভিতরের কারও সহযোগিতা রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক রুহুল সিদ্দিকী রুমান বলেন, অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে এতদিন ধরে মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ চললেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেনি। আমরা চাই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
মানব কল্যাণ সংস্থা (ইনসাফ)-এর চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ পাহাড়ী বলেন, হাসপাতালের ভবনে মাদকাসক্তদের আড্ডা ও নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্কের আলামত পাওয়া উদ্বেগজনক। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায় আছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহমেদ জানান, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। আমরা পুলিশের টহল জোরদারের জন্য অনুরোধ করেছি।
নালিতাবাড়ী থানার ওসি সোহেল রানা বলেন, আগেও ওই স্থান থেকে অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে দুজন এবং মাদক সেবনের জন্য তিনজনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। অভিযোগ পেলে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার ববি জানান, হাসপাতালের মতো সংরক্ষিত স্থানে মাদক সেবন গুরুতর অপরাধ। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতালের মতো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে মাদক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতনরা। তারা দ্রুত প্রশাসনের নজরদারি বৃদ্ধি এবং মাদকের আখড়া বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।